বিপিএলটাই এখন ক্রিকেটের ‘পুনর্বাসন কেন্দ্র’ 

যারা একটাসময় ক্রিকেটের দুনিয়াকে শাসন করেছেন, তাদের প্রতি দর্শকদের আবেগ আর উন্মাদনাকে পুঁজি করে শুরু হয়েছিল লিজেন্ডস লিগ। অপেক্ষাকৃত ছোট বাউন্ডারি, প্রায় ৪০ ছুঁইছুঁই খেলোয়াড়– যাদের ফিটনেসই বলে দেয় ক্রিকেট তাদেরকে আর আগের মতো সঙ্গ দিচ্ছে না। তবু নস্টালজিয়ায় ভোগা তরুণদের জন্য লিজেন্ডস লিগ আলাদা উন্মাদনা।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের এবারের আসরকে তেমনই এক লিজেন্ডস লিগ বা পরিস্থিতি বিবেচনায় পুনর্বাসন কেন্দ্র বললে খুব একটা বাড়াবাড়ি হয়ত হবে না। অন্তত বিদেশি সাইনিংগুলো সেই বার্তায় দেবে আপনাকে। বাংলাদেশ জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের একপাশে সরিয়ে রাখলে বিপিএলের বড় নামগুলোই এই ফ্র্যাঞ্চাইজ লিগের দুর্দশার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। আর দেশি-বিদেশি অনেকের জন্য এই লিগটাই নিজেদের জাতীয় দলের নজরে আসার উপলক্ষ্য। 

শুরু করা যাক সিলেট স্ট্রাইকার্স দিয়ে। যে দলে ইংল্যান্ডের রিস টপলি আছেন। সবশেষ জাতীয় দলে খেলেছেন তিন মাস আগেই। পল স্টার্লিং আয়ারল্যান্ডের নিয়মিত মুখ হলেও আছেন ৩৪ বছর বয়সে। যেকোনো দিন অবসরের ঘোষণা দিয়েও ফেলতে পারেন তিনি। এই দলেই আছেন ২০২২ সালে সবশেষ জাতীয় দলে খেলা আফগান তারকা সামিউল্লাহ শেনওয়ারি। আর সবচে বড় তারকা রাখিম কর্নওয়াল অবশ্য ক্যারিবিয়ানদের হয়ে খেলেছেন মোটে ১ টেস্ট। 

ঢাকা পয়েন্ট টেবিলে যতটা বিবর্ণ। বিদেশি সাইনিং নিয়েও ঠিক তেমনই বিধ্বস্ত। দলের অধিনায়ক থিসারা পেরেরা শেষ জাতীয় দলে খেলেছিলেন ২০২১ সালে। চতুরঙ্গ ডি সিলভা খেলেছেন তারও চার বছর আগে। অর্থাৎ ২০১৭ সালে। আমির হামজা শেষ টি-টোয়েন্টি খেলেন ২০২১ সালে। আর স্টিফেন এসকিনাজি এখন পর্যন্ত জাতীয় দলের স্বাদ পাননি। 

রাজশাহীর পাকিস্তানি তারকা সাদ নাসিম শেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেছিলেন ২০২১ সালে। বরিশালের দাভিদ মালান ৩৭ বছরে এসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন। রাজশাহীর মোহাম্মদ হারিস এবং খুলনার মোহাম্মদ নাওয়াজ অবশ্য ২০২৩ সালে শেষ খেলেছেন। খুঁজছেন জাতীয় দলে ঢুকবার জায়গা।  

সবমিলিয়ে বিপিএলে খেলছেন এমন বিদেশীদের মধ্যে জাতীয় দলে নিয়মিত মুখের সংখ্যা বেশ কমই বলতে হয়। এইক্ষেত্রে মান বাঁচিয়েছে বিগ বাজেটের দুই দল রংপুর রাইডার্স এবং ফরচুন বরিশাল। বরিশালের মোহাম্মদ নাবিও আছেন অবসরের প্রান্তে। তবু কাইল মায়ার্স, জাহানদাদ খান এবং শাহিন আফ্রিদিকে নিজেদের স্কোয়াডে পেয়েছে তারা। রংপুরের আছেন খুশদিল শাহ, মোহাম্মদ ইফতিখার, স্টিফেন টেইলর। 

এসবের বাইরে সিলেটে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারন জোন্স ও ইংল্যান্ডের রিস টপলি, চট্টগ্রামে পাকিস্তানের উসমান খান এবং রাজশাহীতে মোহাম্মদ হারিস ও রায়ান বার্ল খেলছেন বিপিএলে। এবারের বিপিএলের মান বাঁচানোর দায়ও আপাতত তাদেরই কাঁধে।  

অথচ ক্রিস গেইল, এবি ডি ভিলিয়ার্স, ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভ স্মিথ, শহিদ আফ্রিদি, তিলকারাত্নে দিলশান কিংবা কুমার সাঙ্গাকারারা বিপিএলে খেলেছেন এমন দিন পেরিয়েছে অল্প কয়েক বছর আগেও। বিপিএলের বিদেশি তারকারা যেমন বছর ধরে কমেছে, তেমনি ধার কমেছে এই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের। ভবিষ্যতে এই লিগে আর কোন বিদেশি খেলতে আসবেন, এমন প্রশ্নে সম্ভাবনার চেয়ে শঙ্কাই থাকে বেশি। 

পুনর্বাসন তত্ত্বে দেশি ক্রিকেটারদের পিছিয়ে রাখার সুযোগ নেই। সাব্বির রহমান কিংবা মোসাদ্দেক সৈকতরা প্রতি বিপিএলের আগেই নিজেদের লক্ষ্য হিসেবে জানিয়েছেন, জাতীয় দলে ফেরার আকুতি। তেমনি ইয়াসির আলী চৌধুরী রাব্বি কিংবা আবু হায়দার রনির মতো জাতীয় দলের রাডারে থাকা তারকাদের জন্যেও বিপিএল এক বড় উপলক্ষ্য। মোহাম্মদ মিঠুন সর্বশেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ২০২১ সালে। এনামুল হক বিজয় আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ২০২২ সালের পর আর খেলেননি। সিলেটের আরিফুল হক খেলেছেন ২০১৮ সালে। অথচ তারা তিনজনেই নিজ নিজ দলের অধিনায়ক। এমন এক লিগকে পুনর্বাসন কেন্দ্র বলাটা কষ্টকর হলেও হয়ত মিথ্যে কিছু নয়। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *